1. banijjobarta22@gmail.com : admin :

বছরের ব্যবধানে প্রবাসী আয় কমেছে ৮৪ হাজার কোটি টাকা

  • Last Update: Sunday, January 1, 2023

নিজস্ব প্রতিবেদক

সদ্য সমাপ্ত বছরে রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় কমেছে। ২০২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালে এতে এই আয় কমেছে ৭৮৯ কোটি ডলার বা ৮৪ হাজার ৪২৩ কোটি টাকা। ২০২২ সালে প্রবাসীরা দেশে পাঠিয়েছেন ২১ হাজার ২৮৫ কোটি ডলার। টাকার অঙ্কে যার পরিমাণ ২ লাখ ২৭ হাজার ৭৪৯ কোটি টাকা। (প্রতি ডলার ১০৭ টাকা হিসাবে)। ২০২১ সালে প্রবাসীরা পাঠিয়েছিলেন ২২ হাজার ৭৪ কোটি ডলার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সবশেষ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

প্রতিবেদনের তথ্য মতে, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই ও আগস্ট) দেশে টানা ২ বিলিয়ন ডলার করে রেমিট্যান্স এসেছিল। এর পরের মাস সেপ্টেম্বর থেকে টানা চার মাস দেড় বিলিয়ন ডলারের ঘরে। সদ্য বিদায়ী ডিসেম্বর মাসে রেমিট্যান্স এসেছে ১৬৯ কোটি ৯৬ লাখ ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার মূল্য ১৮ হাজার ১৯০ কোটি টাকা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সদ্য বিদায়ী ডিসেম্বর মাসে যে পরিমাণ রেমিট্যান্স এসেছে, তার আগের মাস নভেম্বরের চেয়ে প্রায় ১০ কোটি ডলার বা ১ হাজার ৭০ কোটি টাকা বেশি। আর গত অর্থবছরের একই মাসের (ডিসেম্বর) তুলনায় ৭ কোটি ডলার বেশি। কারণ গত অর্থবছরের ডিসেম্বর মাসে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৬৩ কোটি ডলার।

তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে রেমিট্যান্স এসেছিল ২০৯ কোটি ৬৩ লাখ ডলার, আগস্টে ২০৩ কোটি ৬৯ লাখ ডলার। অর্থাৎ অর্থবছরের শুরুর দুই মাস ২ বিলিয়ন ডলার করে রেমিট্যান্স এসেছিল। এর পরই কমতে থাকে রেমিট্যান্স প্রবাহ, যা দেড় বিলিয়ন বা তার কাছাকাছি। এর পরের মাস সেপ্টেম্বরে এসেছিল ১৫৩ কোটি ৯৬ লাখ ডলার, অক্টোবরে এসেছিল ১৫২ কোটি ৫৫ লাখ ডলার, নভেম্বরে ১৫৯ কোটি ৪৭ লাখ ডলার আর সদ্য বিদায়ী ডিসেম্বরে প্রায় ১৭০ কোটি ডলার বা ১৬৯ কোটি ৯৬ লাখ ডলার পাঠিয়েছেন বিভিন্ন দেশে বসবাসরত বাংলাদেশিরা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট ডিপার্টমেন্টের কর্মকর্তারা জানান, গত বছর অধিকাংশ ব্যাংক পরিচালন মুনাফায় ভালো করেছে ফরেক্সের (বৈদেশিক মুদ্রা) কারণে। এখন রেমিট্যান্স প্রবাহ কিছুটা বাড়তে শুরু করেছে। আগামীতে দুটি ঈদ আছে। ঈদকে কেন্দ্র করে রেমিট্যান্স প্রবাহ আরও বাড়বে। আমাদের দেশের ডলার সংকটও কেটে যাবে, রিজার্ভও ইতিবাচক ধারায় ফিরে আসবে বলে আশা তাদের।

এর আগে ২০২১-২২ অর্থবছরে ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে দেশে ২ হাজার ১০৩ কোটি ১৭ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল। এটি তার আগের অর্থবছরের চেয়ে ১৫ দশমিক ১১ শতাংশ কম। ২০২০-২১ অর্থবছরে ২ হাজার ৪৭৭ কোটি ৭৭ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন বিভিন্ন দেশে বসবাসরত বাংলাদেশি প্রবাসীরা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সবশেষ হিসাব বলছে, ২৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৩৮৩ কোটি ৮৯ লাখ ডলার বা ৩৩ দশমিক ৮৪ বিলিয়ন ডলার। এক বছর আগের একই দিনে (২০২১ সালের ডিসেম্বর) ছিল ৪ হাজার ৫৮০ কোটি ২২ লাখ ডলার। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে দেশের রিজার্ভ কমেছে ১ হাজার ১৯৬ কোটি ৩৩ লাখ ডলার। আর এক মাসের ব্যবধানে কমেছে প্রায় ২ বিলিয়ন ডলার।

তবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) মানদণ্ড অনুযায়ী রিজার্ভ গণনা করলে বর্তমান রিজার্ভ থেকে আরও ৮ দশমিক ৪০ বিলিয়ন ডলার বাদ যাবে, এতে ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ দাঁড়াবে ২৫ দশমিক ৪৪ বিলিয়ন ডলারে। আইএমএফের মানদণ্ড অনুসারে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে মজুদকৃত রিজার্ভ থেকে রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল (ইডিএফ) থেকে শ্রীলঙ্কাকে দেওয়া ঋণ এবং রিজার্ভ থেকে দেশীয় প্রকল্পে অর্থায়নের ব্যয় বাদ যাবে। যদিও সরকার এখন আইএমএফ এবং নিজস্ব অর্থাৎ দুই ধরনের হিসাবই রাখছে।

রিজার্ভ কমা নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক বলেন, আমরা তো মনে করি গ্লোবাল ডিসিশনের ইমপ্যাক্ট আমাদের এখানে এসেছে। শ্রম মন্ত্রণালয়ের যে হিসাব তাতে অনেক লোক দেশের বাইরে গেছেন, তারা যখন বৈধ চ্যানেলের মাধ্যমে টাকা পাঠানো শুরু করবেন তখন রেমিট্যান্স বাড়বে। সামনে রপ্তানির একটা চ্যালেঞ্জ আছে আবার ইমপোর্টও কিছু থাকে, সব মিলে হুন্ডিকে যদি সতর্কতার সঙ্গে প্রতিহত করা যায় তাহলে রিজার্ভ আবারও ইতিবাচক ধারায় ফিরবে।

তিনি আরও বলেন, আমাদের তেল-কয়লা আমদানি করতে হচ্ছে। এসব কারণে ইমপোর্ট একটু বেড়েছে, যেটা মাঝখানে কমেছিল। এতে জরুরি প্রয়োজনে পেমেন্ট বেশি হচ্ছে রিজার্ভও একটু কমছে। এটা সাময়িক কমা, ৩৪ বিলিয়নের মধ্যেই আমরা তিন-চার মাস ধরে আছি। সামনে ঈদ আছে, উৎসব আছে; রেমিট্যান্স বাড়বে, রিজার্ভও ইতিবাচক অবস্থানে যাবে। ব্যাংকগুলোও এলসি পরিশোধ করতে পারবে, তখন রিজার্ভ থেকে কোনো ডলার খরচ করতে হবে না।

Banijjobarta© Copyright 2022-2023, All Rights Reserved
Site Customized By NewsTech.Com