1. banijjobarta22@gmail.com : admin :

মৃত পরিচালকের অর্থ-শেয়ার আত্মসাতের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ

  • Last Update: Monday, July 24, 2023

রাসেল মাহমুদ

জাল কাগজ দিয়ে ভুয়া বিও অ্যাকাউন্ট খুলে মাস্টার ফিড এগ্রোটেক নামের একটি এসএমই কোম্পানির মৃত পরিচালকের শেয়ার বিক্রি করে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

এ ঘটনায় নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যানের কাছে অভিযোগ করেছে ফার্স্ট ক্যাপিটাল সিকিউরিটিজ নামের একটি ব্রোকারেজ হাউজ।

তবে সিকিউরিটিজ হাউজটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কাউসার আল মামুনের বিরুদ্ধে কমিশনে কোম্পানিটির পরিচালকের শেয়ার ও টাকা আত্মসাৎ চেষ্টার পাল্টা একটি অভিযোগ করেছেন মাস্টার ফিড এগ্রোটেকের সাবেক (মৃত) পরিচালক রফিকুল আলমের স্ত্রী উম্মে হাবিবা ইয়াসমিন।

নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান বিএসইসি বলছে, পাল্টাপাল্টি অভিযোগ দুটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম রোববার বাণিজ্য বার্তাকে বলেন, কমিশনে যে কেউ অভিযোগ দিতে পারেন। অভিযোগের সত্যতা যাচাই-বাছাই করে কমিশন প্রয়োজন হলে তদন্ত করে দেখবে। তদন্তে কারো বিরুদ্ধে অনিয়মের প্রমাণ পাওয়া গেলে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থাও নেওয়া হবে।

জানা গেছে, ১৮ জুলাই ফার্স্ট ক্যাপিটালের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কাউসার আল মামুন ভুয়া অ্যাকাউন্ট খুলে শেয়ার আত্মসাতের অভিযোগে মতিঝিল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন।

বিএসইসিতে পাঠানো ফার্স্ট ক্যাপিটালের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কাউসার আল মামুন স্বাক্ষরিত চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, মাস্টার ফিড এগ্রোটেকের পরিচালক ছিলেন রফিকুল আলম। সম্প্রতি তিনি মারা যান। তার নামে বরাদ্দ ৭০ লাখ ৫০ শেয়ার আত্মসাৎ করছে একটি চক্র।

এই শেয়ারের বর্তমান বাজারমূল্য ৯ কোটি টাকা। এক্ষেত্রে চলতি বছরের ৫ মার্চ উম্মে হাবিবা ইয়াসমিন নামে একজন নারী পাসপোর্ট এবং ব্যাংক অ্যাকাউন্টের চেক দিয়ে ফার্স্ট ক্যাপিটালে বিও অ্যাকাউন্ট খোলেন। দুই মাস পর ওই অ্যাকাউন্টে মাস্টার ফিড অ্যাগ্রোটেকের ১৭ লাখ ৬২ হাজার ৫০০টি শেয়ার জমা হয়। এরপর ৪ এপ্রিল থেকে ২৩ মের মধ্যে ১৫ লাখ ৩৫ হাজার ৭০৮টি শেয়ার বিক্রি করে ১ কোটি ১৮ লাখ টাকা নিয়ে যায়।

পরপর বড় অঙ্কের টাকা তুলে নেওয়ায় বিষয়টি নিয়ে সন্দেহ হলে অ্যাকাউন্টের তথ্য তলব করা হয়। এক্ষেত্রে অ্যাকাউন্ট খোলার সময় যে মোবাইল নম্বর ব্যবহার করা হয়েছে, তা উম্মে হাবিবার নয়। তিনি নিজেকে উম্মে হাবিবার বোন ইভা আকতার বলে দাবি করেন। উম্মে হাবিবা নিজেকে মৃত পরিচালক রফিকুল আলমের স্ত্রী দাবি করেন।

কিন্তু বিও অ্যাকাউন্ট খোলার সময় যে পাসপোর্ট নম্বর ব্যবহার করা হয়েছে, সেখানে তার স্বামীর নাম মো. মোকাদ্দেস হোসাইন। দুজনের ঠিকানায়ও মিল নেই। এছাড়াও অ্যাকাউন্টের পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দেওয়া হয়েছে মাস্টার ফিডের বর্তমান কোম্পানি সেক্রেটারি আবুল বাসারকে।

এক্ষেত্রে গ্রাহক পাওয়ার অব অ্যাটর্নি ও নমিনিকেও চেনেন না। এমনকি উম্মে হাবিবা তার শ্বশুরের নামও বলতে পারেননি বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়। এছাড়া বিভিন্ন ডকুমেন্টের ক্ষেত্রেও জালিয়াতির আশ্রয় নেওয়া হয়েছে।

এ অবস্থায় মাস্টার ফিডের কোম্পানি সেক্রেটারি আবুল বাসার ব্রোকারেজ হাউজে ফোন করে জানান, গ্রাহক উম্মে হাবিবা অসুস্থ। তাকে ছাড়াই পাওয়ার অব অ্যাটর্নির মাধ্যমেই লেনদেন নিষ্পত্তি করতে হবে। এতে ব্রোকারেজ হাউজ রাজি না হওয়ায় ১৬ জুলাই মাস্টার ফিডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. কবির হোসেন ৪/৫ জনকে সঙ্গে নিয়ে সেখানে সশরীরে গিয়ে লেনদেন নিষ্পত্তি করতে বলেন।

সে সময়ে বোরকা পরা অবস্থায় শুধু চোখ খোলা একজনকে উম্মে হাবিবা হিসাবে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে অ্যাকাউন্টের ডকুমেন্ট চাইলে তারা গ্রহণযোগ্য কোনো তথ্য দিতে পারেননি।

বিষয়টি সম্পর্কে মাস্টার ফিডের কোম্পানি সেক্রেটারি আবুল বাসার বলেন, এখানে কোনো কাগজপত্র জালিয়াতি করা হয়নি। সব বৈধ কাগজের মাধ্যমেই অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে।

তিনি বলেন, রফিকুল আলম আমাদের কোম্পানি পরিচালক ছিলেন। গত বছর তিনি মারা যান। তার মোট শেয়ারের ২৫ শতাংশ স্ত্রী উম্মে হাবিবাকে নমিনি হিসাবে দিয়েছিলেন। স্বামীর মৃত্যুর পর তার স্ত্রীর নামের ২৫ শতাংশ শেয়ার বিক্রি করে তিনি (হাবিবা) টাকা নিতে চেয়েছেন।

পাসপোর্ট এবং ন্যাশনাল আইডি কার্ডে উম্মে হাবিবার স্বামীর নাম দুই রকম থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, উম্মে হাবিবার আগে একটি বিয়ে হয়েছিল। পাসপোর্টে সেই স্বামীর নাম রয়েছে। পরে তিনি রফিকুল আলমকে বিয়ে করেন। সেই সময় এনআইডি কার্ডে স্বামীর নাম পরিবর্তন করা হয়। তবে ব্রোকারেজ হাউজকে তিনি কোনো ধরনের হুমকি দেওয়ার কথা অস্বীকার করেন।

এদিকে ফার্স্ট ক্যাপিটাল সিকিউরিটিজের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. কাউসার আল মামুনের বিরুদ্ধে মাস্টার ফিড এগ্রোটেকের মৃত পরিচালক রফিকুল আলমের শেয়ার ও টাকা আত্মসাৎ চেষ্টার অভিযোগ করেছেন স্ত্রী উম্মে হাবিবা ইয়াসমিন।

গত ২৩ জুলাই তিনি বিএসইসি চেয়ারম্যান বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন। তবে কমিশনে তা জমা পড়েছে সোমবার (২৪ জুলাই)।

অভিযোগটিতে মো. কাউসার আল মামুনের বিরুদ্ধে অসৌজন্যমূলক আচরণের অভিযোগ তুলে প্রতিকার চেয়েছেন উম্মে হাবিবা।

তিনি বলেন, গত বছরের ১৫ জুলাই আমার স্বামী (মাস্টার ফিডের প্রয়াত পরিচালক) মৃত্যুবরণ করেন। ফলে আদালতের রায়ে উত্তরাধিকার সার্টিফিকেট অনুযায়ী স্বামীর মোট শেয়ারের ২৫ শতাংশ বা ১৭ লাখ ৬২ হাজার ৫০০টি শেয়ার পান তিনি।

এ শেয়ার নিজের নামে নিতে ফার্স্ট ক্যাপিটাল সিকিউরিটিজের মতিঝিল শাখায় একটি বিও হিসাব (বিও আইডি নং ১২০৪৪৩০০৭৫৮৭৪৯৪৯) খুলেন উম্মে হাবিবা ইয়াসমিন। পরবর্তীতে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের অনুমোদন নিয়ে সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডের মাধ্যমে ওই বিও হিসাবে শেয়ার স্থানান্তর করা হয় বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

উম্মে হাবিবা বলেন, বিও হিসাবে শেয়ার স্থানান্তরের পর পর্যায়ক্রমে শেয়ার বিক্রি করে ও বিভিন্ন তারিখে ফার্স্ট ক্যাপিটালের সিইও মো. কাউসার আল মামুনের অনুমোদনের মাধ্যমে টাকা উত্তোলন করেন উম্মে হাবিবা। এ ক্ষেত্রে গত ১৪ মে থেকে ১৮ মে পর্যন্ত সময়ে ১ কোটি ১৮ লাখ টাকা উত্তোলন করেন তিনি। কিন্তু এরপরে অজ্ঞাত কারণে সিইও কাউসার উম্মে হাবিবার পরিচয় নিয়ে অহেতুক বিভিন্ন রকম অজুহাত তৈরি করে টাকা দেওয়া বিলম্ব করার মাধ্যমে টাকা আত্মসাতের চেষ্টা করেন বলে অভিযোগ করেছেন উম্মে হাবিবা।

এর ধারাবাহিকতায় উম্মে হাবিবা গত ১৭ জুলাই তার বাবা, পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দেওয়া মো. আবুল বাসার এবং মাস্টার ফিডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. কবীর হোসেনকে নিয়ে ফার্স্ট ক্যাপিটালে যান। শেয়ার বিক্রয়ের টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানানোর কারণ জানতে চাইলে মো. কাউসার আল মামুন তাদের সবার সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন।

কাউসার আল মামুন ওই সময় উম্মে হাবিবার পরিচয় নিয়ে বার বার সন্দেহ করেন বলে চিঠিতে জানানো হয়েছে। এমনকি তিনি বলেন, আপনি উম্মে হাবিবা ইয়াসমিন না এবং আপনার সঙ্গে ব্যক্তি আপনার বাবা নন, এগুলো সব সাজানো নাটক। তখন তাকে প্রমাণ হিসেবে সব কাগজ মিলিয়ে দেখতে বলেন উম্মে হাবিবা। কিন্তু মো. কাউসার আল মামুন কোনোভাবেই প্রমাণ করতে রাজী হননি এবং অপমানজনক ও কুরুচিপূর্ণ ভাষা ব্যবহারের মাধ্যমে হেনস্থা করেন- বলেও অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।

চিঠিতে উম্মে হাবিবা আরও বলেন, ফার্স্ট ক্যাপিটালের সিইও’র আচরণ কাম্য ছিল না। যা উনার সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে দেখলেই প্রমাণিত হবে। একই সঙ্গে তিনি কমিশনে প্রমাণ হিসেবে রফিকুল আলমের মৃত্যু সনদ, আদালতের উত্তরাধিকার আদেশ, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের অনুমোদন কপি, জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি, ফান্ড রিকুইজিশন স্লিপ এবং রফিকুল আলম ও উম্মে হাবিবা ইয়াসমিনের কাবিন নামার কাগজ জমা দিয়েছেন।

রোববার ফার্স্ট ক্যাপিটাল সিকিউরিটিজের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. কাউসার আল মামুন বাণিজ্য বার্তাকে বলেন, আমার বিরুদ্ধে শেয়ার ও অর্থ আত্মসাৎ চেষ্টার যে অভিযোগ করা হয়েছে তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। উম্মে হাবিবা ইয়াসমিন রফিকুল আলমের স্ত্রী কিনা তা নিশ্চিত হতে না পারায় আমরা তাকে টাকা দিইনি। তিনি যেদিন আমার অফিসে আসেন তখন তার চোখ ছাড়া সব কাপরে আবৃত ছিলো। তাছাড়া তিনি তার শ্বশুড়ের নাম বলতে পারেননি, স্বামীর সঙ্গে যে বাসায় থাকতেন তার ঠিকানাও দিতে পারেননি।

তিনি বলেন, এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে আমরা কমিশনে অভিযোগ করেছি। আমরা অভিযোগ করার পর উম্মে হাবিবা কমিশনে পাল্টা অভিযোগ করেছেন। তার অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই।

Banijjobarta© Copyright 2022-2023, All Rights Reserved
Site Customized By NewsTech.Com