1. banijjobarta22@gmail.com : admin :

বিনিয়োগকারীদের ‘গলার কাঁটা’ দুই ব্যাংকের শেয়ার

  • Last Update: Monday, December 5, 2022

রাসেল মাহমুদ

চলতি বছর শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া ইউনিয়ন ব্যাংক লিমিটেড ও গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের শেয়ারে বিনিয়োগ করে বিপাকে পড়েছেন হাজার হাজার মানুষ। লেনদেন শুরুর পর থেকেই শেয়ার দুটি অভিহিত মূল্য বা ফেস ভ্যালুর নিচে চলে গেছে। এতে মূলধন হারানোর শঙ্কায় রয়েছেন অধিকাংশ বিনিয়োগকারী।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অপেক্ষাকৃত দুর্বল প্রতিষ্ঠান হওয়ায় এই দুই ব্যাংকের শেয়ারে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ নেই। ফলে ক্রেতা সংকট রয়েছে। এ অবস্থায় লসে শেয়ার বিক্রি করতে চাইলেও তা সম্ভব হচ্ছে না।

বিনিয়োগকারীরা বলছেন, নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কারণেই দুর্বল কোম্পানিগুলো বাজারে আসার সুযোগ পাচ্ছে। দিন শেষে ক্ষতি হচ্ছে বিনিয়োগকারীদের।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৬ নভেম্বর ১০ টাকা অভিহিত মূল্যে শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু করে গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক। লেনদেন শুরুর দিনই শেয়ারটি এক টাকা বা ১০ শতাংশ কমে ৯ টাকায় নামে। ওইদিন ব্যাংকটির প্রতিটি শেয়ারের সর্বোচ্চ মূল্য উঠেছিল ৯ টাকা ৮০ পয়সা। লেনদেন হয়েছিল ১১ হাজার ৮১৭ বারে ২ কোটি ৩৫ লাখ ৩৩ হাজার ৬৬১টি শেয়ার। যার বাজার মূল্য ছিল ২১ কোটি ২৫ লাখ টাকা প্রায়।

আজ সোমবারও (৫ ডিসেম্বর) শেয়ারটি সেই ৯ টাকায় লেনদেন হয়েছে। তবে ১৩ বারে মাত্র ২১ হাজার ৭৪৬টি শেয়ার হাত বদল হয়েছে।

কোম্পানিটি ফিক্সড প্রাইস পদ্ধতিতে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে শেয়ারবাজার থেকে ৪২৫ কোটি টাকা মূলধন উত্তোলন করে। এই টাকা তুলতে কোম্পানিটি ৪২ কোটি ৫০ লাখ সাধারণ শেয়ার ইস্যু করে।

গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের আইপিও শেয়ার পাওয়া বিনিয়োগকারী আশরাফুল ইসলাম বলেন, লেনদেনের প্রথম দিনই শেয়ারটি ফেস ভ্যালুর নিতে চলে গেছে। ১০ টাকার শেয়ার ৯ টাকায় নেমেছে, এরপরও ক্রেতা নেই। এই শেয়ারে বিনিয়োগ যেন গলায় কাঁটা বেঁধার মতো। না পারছি রাখতে না পারছি বিক্রি করতে।

প্রায় একই কথা বলেন নুরুন নাহার নামের এক বিনিয়োগকারী। তার ভাষায়, যেকোনো কোম্পানির আইপিও অনুমোদন দেওয়ার সময় বিএসইসি যাচাই-বাছাই করে না বলেই এই অবস্থা। গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের শেয়ারে বিনিয়োগ করে এখন কান্না করতে হচ্ছে।

শুধু গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকই নয়, ইউনিয়ন ব্যাংকের শেয়ারও এখন অভিহিত মূল্যের নিচে পড়ে আছে। এই কোম্পানিটি চলতি বছরের ২৬ জানুয়ারি শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু করে। অভিহিত মূল্য ১০টাকা হলেও সোমবার (৫ ডিসেম্বর) শেয়ারটির ক্লোজিং প্রাইস ছিল ৯ টাকা ৩০ পয়সা। অর্থাৎ প্রতিটি শেয়ারে ৭০ পয়সা লসে রয়েছেন বিনিয়োগকারীরা।

ইউনিয়ন ব্যাংক শেয়ারবাজার থেকে ৪২৮ কোটি টাকা উত্তোলন করে। এ জন্য তারা ৪২ কোটি ৮০ লাখ সাধারণ শেয়ার ইস্যু করে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি ব্রোকার হাউজের শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, ব্যাংক দুটিতে বিনিয়োগ করে চরম অস্বস্তিতে রয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। কেউ কেউ তো অফিসে এসে কান্নাও করছেন। একটি কোম্পানি বাজারে লেনদেন শুরু করার দিনই ফেস ভ্যালুর নিচে চলে যাবে তা কোনোভাবেই কাম্য নয়। আইপিও অনুমোদন দেওয়ার আগে সংশ্লিষ্টদের আরও যাচাই-বাছাই করা জরুরি বলে মনে করেন তিনি।

তবে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন বলছে, নিয়ম মেনেই ব্যাংক দুটির আইপিও অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

বিষয়টি নিয়ে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বাণিজ্য বার্তাকে বলেন, যে কোম্পানিগুলোর আইপিও সাইজ অনেক বড়, সাপ্লাই-ডিমান্ড দিয়েই তাদের প্রাইস ডিটারমাইন্ড হয়। অফার সাইজ বড় থাকায় ফিট ফ্লোর শেয়ার প্রথম দিক থেকেই অনেক বেশি থাকে। এ কারণে সেল প্রেশার কিছুটা বেশি হয়। এছাড়া ব্যাংকের শেয়ারের প্রতি বর্তমানে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ কিছুটা কম। নতুন কোনো বিনিয়োগকারী ব্যাংকের শেয়ারে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী না। এ কারণে ওই শেয়ারে কিছুটা অনাগ্রহ থাকতে পারে।

তিনি বলেন, পাবলিক ইস্যু রুলস-২০১৫ অনুযায়ী কমিশন কোম্পানি দুটিকে অনুমতি দিয়েছে। ব্যাংক যেহেতু প্রাইমারি রেগুলেটর বিষয়টি তারাও দেখে। সবকিছু দেখে প্রসপেক্টাসে ডিসক্লোজ করে আসছে। তাছাড়া একটা নির্দিষ্ট পারসেন্টেজের উপরে আন্ডার সাবস্ক্রিপশন হলে আবেদন বাতিল হয়ে যায়। যেহেতু এটা বাতিল হয়নি সেই হিসাবে লিস্টেড হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, অনেক ভালো ভালো ব্যাংকের শেয়ারের দামও ফেস ভ্যালুর কাছে। মার্কেটে যখন একটু লিকিউডিটি বাড়বে, ইনভেস্টরের বেজ স্ট্রং হবে এবং মার্কেট আপট্রেন্ডে থাকবে তখন গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক বা ইউনিয়ন ব্যাংক সবই ভালো লেভেলে থাকবে। প্রধানত দেখতে হবে, কোম্পানিগুলো লভ্যাংশ দিচ্ছে কিনা বা সক্ষমতা আছে কিনা। যদি লভ্যাংশ না দিতে থাকে তখন কী করা যায় এটা কমিশন হয়তো দেখবে।

রেজাউল করিম বলেন, কোনো শেয়ার ফেস ভ্যালুর নিচে আসলেই যে সে কোম্পানি খারাপ হয়ে গেল আমরা এভাবে চিন্তা করি না। আমরা চিন্তা করি কোম্পানির ফাইন্যান্সিয়াল পজিশন ভালো কিনা। তারা যদি লভ্যাংশ দিতে পারে তাহলে ঠিক আছে। শেয়ারের প্রাইসের ব্যাপারে কমিশনের কিছু করার থাকে না। ১০ টাকার শেয়ার যখন ৮০-৯০ টাকায় ট্রেড হয় তখনও আমরা কিছু বলি না। অভিহিত মূল্যের নিচে নামলেও আমাদের কিছু করণীয় থাকে না। তবে কোম্পানি দুটি কমপ্লায়েন্স অনুযায়ী চলছে কিনা কমিশন সেগুলো দেখবে।

Banijjobarta© Copyright 2022-2023, All Rights Reserved
Site Customized By NewsTech.Com